Hot Posts

6/recent/ticker-posts

ঢাবিতে //তোফাজ্জল হত্যা: ১৬৪// ধারায় জবানবন্দি দিচ্ছেন ছয় //শিক্ষার্থী''

 

''ঢাবিতে তোফাজ্জল হত্যা: ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিচ্ছেন ছয় শিক্ষার্থী''



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেন নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয়জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা তোফাজ্জল হোসেনকে মারধর করেন, যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করেন। পরে ছয় শিক্ষার্থী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তাঁরা মানসিকভাবে অসুস্থ তোফাজ্জল হোসেনকে ফজলুল হক হলের ভেতরে আটকে রেখে মারধর করেন। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতে হলের ভেতরে ঘটে যাওয়া গণপিটুনির এই মর্মান্তিক ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করে। শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, কিন্তু পরে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ছয়জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, জিওগ্রাফির আল হসাইন সাজ্জাদ এবং ওয়াজিবুল আলম।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহ মোহাম্মদ মাসুম গণমাধ্যমকে জানান, শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জল হোসেনকে সন্দেহবশত হলে আটকে রেখে মারধর করেন। হামলার পর হল কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করে। তবে প্রক্টরিয়াল টিম তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে সরাসরি শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ তোফাজ্জলকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে তাঁকে রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ভীষণভাবে মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি সহিংসতার একটি বহিঃপ্রকাশ। এমন মর্মান্তিক ঘটনার দায়ভার কারো না কারো ওপর বর্তায়, আর এ ঘটনায় সম্পৃক্তদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।

 ঘটনার প্রেক্ষাপট

তোফাজ্জল হোসেনকে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয় ফজলুল হক মুসলিম হলের ভেতরে। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এলাকায় প্রায়ই ঘোরাঘুরি করতেন। ঘটনার দিন তাঁকে সন্দেহবশত হলে আটকে রেখে শিক্ষার্থীরা মারধর শুরু করেন। মারধরের সময় শিক্ষার্থীরা তাকে চোর বা অপরাধী ভেবে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় হলের অনেক শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং কিছু শিক্ষার্থী তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করলেও উত্তেজিত জনতার থামাতে ব্যর্থ হন।

তোফাজ্জল হোসেনকে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যদিও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, প্রক্টরিয়াল টিম তা না করে প্রথমে তাকে থানায় নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ বুঝতে পারে যে তোফাজ্জলের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক, এবং তখন তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 ঘটনার প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পর ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের একাংশ এই ঘটনায় মর্মাহত এবং উদ্বিগ্ন। তারা দাবি করছে যে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক একটি ঘটনা এবং এমন সহিংস আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মানানসই নয়। অনেকেই বলছেন, এটি ছাত্রদের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও হল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।

 আদালতে শিক্ষার্থীদের জবানবন্দি

আদালতে উপস্থিত ছয় শিক্ষার্থী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন এবং তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দিতে তাঁরা ঘটনার বিবরণ দেন এবং মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা আদালতকে জানান, তাঁরা সন্দেহবশত তোফাজ্জলকে মারধর করেন এবং ঘটনার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন না। জবানবন্দিতে আসামিরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করলেও তাঁরা নিজেদের ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন।

 বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, "এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অমানবিকতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা যা প্রয়োজন তা করা হবে।"

প্রক্টরিয়াল টিমের প্রতি অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কেননা তাঁরা তোফাজ্জলকে হাসপাতালের পরিবর্তে প্রথমে থানায় নিয়ে যান। প্রক্টরিয়াল টিমের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ চিকিৎসা না দিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া তোফাজ্জলের অবস্থাকে আরও সংকটাপন্ন করেছে। এই বিষয়টি নিয়েও তদন্ত কমিটি কাজ করছে এবং প্রক্টরিয়াল টিমের ভূমিকা নিয়ে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

 শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও দায়বদ্ধতা

অনেক শিক্ষার্থী এই ঘটনার পর নিজেদের নিরাপত্তা ও নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে চিন্তিত। তাঁরা মনে করছেন, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নৈতিক শিক্ষার অভাবেই এমন ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্য, সহনশীলতা ও নৈতিক শিক্ষা জোরদার করা। অনেকেই বলেন, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা থাকা উচিত ছিল, তা প্রদর্শিত হয়নি। এটি ছাত্রসমাজের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। ঢাবির ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড দলীয় নীতি বিরোধী এবং যারা এতে জড়িত তারা নিজেদের দায় এড়াতে পারবে না। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছে।

 ভবিষ্যৎ করণীয়

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। এর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মশালা, নৈতিক শিক্ষা প্রচার ও সহিংসতা বিরোধী প্রচারণা অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার এবং প্রক্টরিয়াল টিমের সক্ষমতা উন্নত করার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও জানিয়েছে, যেকোনো শিক্ষার্থীকে সুরক্ষিত রাখা এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের আচরণগত উন্নয়ন এবং নৈতিক শিক্ষার জন্য নিয়মিত কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। 

এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যে প্রশাসন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকসমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করা। এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার সংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে এবং শিক্ষ

Post a Comment

0 Comments