Hot Posts

6/recent/ticker-posts

#ইসরাইলে #হিজবুল্লাহর #নয়া #অভিযান, #বাড়ছে #পূর্ণমাত্রার #যুদ্ধের# আশঙ্কা

 

‘ইসরাইলে হিজবুল্লাহর নয়া অভিযান, বাড়ছে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্ক ‘

 ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার উত্তেজনা এবং পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের সম্ভাবনা

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দেখা গেছে, ইসরাইলের সামরিক অবস্থানগুলোতে হিজবুল্লাহর ধারাবাহিক হামলার কারণে উভয় পক্ষের মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসরাইলের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এসব পাল্টা হামলা সংঘটিত হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতির কারণে লেবানন ও ইসরাইল সীমান্তজুড়ে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

হিজবুল্লাহ শুক্রবার জানিয়েছে, তারা গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য এবং দক্ষিণ লেবাননে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলার প্রতিক্রিয়ায় নতুন অভিযান চালিয়েছে। তারা ইসরাইলের আল-মালকিয়া সামরিক অবস্থানকে কামানের গোলা দিয়ে সরাসরি আঘাত হানে এবং একই সঙ্গে হারমন ব্রিগেড ৮১০-এর কমান্ড হেডকোয়ার্টার মা'আলেহ গোলানি সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি শোমেরা এবং মেটাত ঘাঁটিতে কাতিউশা রকেট ছোড়ে। এছাড়া, হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ইসরাইলের পশ্চিম ব্রিগেডের কমান্ড হেডকোয়ার্টার ইয়ারা ব্যারাকও সরাসরি আঘাতের শিকার হয়।

এদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে, উত্তর ইসরাইলে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় দুই ইসরাইলি সেনা নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছে। হিজবুল্লাহর এই পাল্টা হামলাগুলো ইসরাইলের সামরিক অবস্থানগুলোতে লক্ষ্যবস্তু তৈরি করছে এবং এতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে অন্তত ১৭টি হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে অধিকৃত গোলান মালভূমি ও কাফারচৌবা পাহাড় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।


ইসরাইল হিজবুল্লাহর এসব হামলার পাল্টা জবাবে লেবাননে বিমান হামলা শুরু করে। ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর কয়েক ডজন রকেট লাঞ্চার প্যাডসহ অন্যান্য সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে। ইসরাইলের বিমান হামলায় লেবাননজুড়ে অন্তত ৩৭ জন নিহত এবং তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হামলায় আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক, যারা তাদের বাড়ি-ঘর ও জীবনযাপনের নিরাপত্তা হারিয়েছেন। ইসরাইলের এই সন্ত্রাসী হামলাগুলোর কারণে লেবাননের জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

গাজার ওপর ইসরাইল স্থল আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের ভেতরে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। তারা বারবার ইসরাইলকে সতর্ক করেছে যে, যদি ইসরাইল তাদের আক্রমণ বন্ধ না করে, তবে হিজবুল্লাহও তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখবে। হিজবুল্লাহর এই দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সম্ভাব্য বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


এই সংঘর্ষ লেবানন ও ইসরাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বৃহত্তর আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সম্ভাবনাও তৈরি করছে। ইরান, সিরিয়া ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো হিজবুল্লাহর পাশে থাকতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। ইতোমধ্যে ইরান ঘোষণা করেছে যে, তারা হিজবুল্লাহকে যে কোনো ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, তারা ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন লেবাননের দিকে।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই সংঘর্ষে বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, উভয় পক্ষই তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে, যা আরও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।

লেবাননে ইসরাইলের বিমান হামলা ও সংঘর্ষের ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হয়েছে এবং হাজারো মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।

লেবাননের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই সংকটাপন্ন ছিল, যা এই সংঘর্ষে আরও অবনতি ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে লেবানন রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় ইসরাইলের সঙ্গে উত্তেজনা লেবাননের জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে। 


এই সংঘর্ষের অবসানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। উভয় পক্ষকেই সামরিক শক্তির ব্যবহারের পরিবর্তে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী হতে হবে। তবে, এ ধরনের সহিংসতা বন্ধে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে। 

ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষের মূল কারণগুলো সমাধান না হলে এই ধরনের সহিংসতা চলতেই থাকবে। ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে হিজবুল্লাহ ইসরাইলকে চাপের মুখে ফেলতে চায়, যা ফিলিস্তিনি সংকটের একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে, ইসরাইল তাদের ভূখণ্ডের নিরাপত্তার জন্য হিজবুল্লাহকে একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখে এবং তাদের আক্রমণ ঠেকাতে সক্রিয় থাকে।

সমাধানের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংঘাতের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া, মানবিক সাহায্য প্রদান ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতে হবে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘর্ষ শুধুমাত্র লেবানন-ইসরাইল সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উভয় পক্ষই তাদের অবস্থানে অনড় থাকলে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সংঘর্ষের অবসানে দ্রুত ও কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্থায়ী ও ন্যায়সংগত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।


Post a Comment

0 Comments