Hot Posts

6/recent/ticker-posts

৫ বছরে //ভারতে রপ্তানি হয়েছে //সাড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ


''৫ বছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ''

ভারতে ইলিশ রপ্তানির পেছনের কারণ এবং বাণিজ্যিক লাভক্ষতি: পর্যালোচনা

বাংলাদেশের ইলিশ মাছের খ্যাতি সারা বিশ্বের বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এই মাছের উৎপাদন থেকে শুরু করে রপ্তানি পর্যন্ত নানা বিষয় নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলে আসছে। সম্প্রতি আবারও ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। চলতি বছরে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে ভারতে মোট রপ্তানিকৃত ইলিশের পরিমাণকে সাড়ে ৫ হাজার টনে নিয়ে গিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে নানা বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক কারণ, যা বাণিজ্য উপদেষ্টা ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। এই লেখায় আমরা ইলিশ রপ্তানির কারণ, এর বাণিজ্যিক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করব।

    দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ       নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ বছরে ভারতে ৫ হাজার ৫৯৮ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রপ্তানির মাধ্যমে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ইলিশ রপ্তানির বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তকে আবেগপ্রবণ বলে আখ্যা দেন, তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই পরিমাণ রপ্তানি দেশের ইলিশের বাজারে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না। 

উপদেষ্টা আরও জানান, ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার টন রপ্তানি করা হচ্ছে, যা মোট উৎপাদনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশেরও কম। এই পরিমাণ ইলিশ চাঁদপুরের একটি দিনের মজুদের সমান। রপ্তানি না করলে ইলিশের বড় একটি অংশ চোরাচালানের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যায়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। 

২০১৫ সালের রপ্তানি নীতিমালায় ইলিশ রপ্তানির অনুমতি থাকলেও ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ইলিশ ভারতে রপ্তানি শুরু হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন ইলিশ রপ্তানি হয়, এরপরের বছর ১ হাজার ৬৯৯ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ রপ্তানি হয়। এই পরিমাণ রপ্তানির তুলনায় অনুমোদিত পরিমাণ অনেক বেশি হলেও বিভিন্ন কারণে সেই পরিমাণে ইলিশ রপ্তানি সম্ভব হয়নি। 

প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় ভারতের পক্ষ থেকে ইলিশ রপ্তানির বিশেষ অনুরোধ করা হয়। এবারও কলকাতার ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইলিশ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়। ভারতের দুর্গাপূজার মতো বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ইলিশ সরবরাহ করাটা বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এই রপ্তানি ভূমিকা রাখে। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে দেশের মানুষের ইলিশের চাহিদা পূরণে কোনো ঘাটতি হবে না। দেশের বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এবং রপ্তানির পরও দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেড়ে যাবে না বলে তিনি মনে করেন। 

ইলিশ রপ্তানির পেছনে বাণিজ্যিক লাভ আছে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। একইসাথে, চোরাচালান বন্ধ করে বৈধ পথে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক লাভ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। তবে, রপ্তানির বিপক্ষের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইলিশের দাম বাড়ার আশঙ্কা। 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে ইলিশের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে শুরু করে প্রতি বছর গড়ে পাঁচ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে, যা ইলিশের বাজারে চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইলিশের মোট উৎপাদনের একটি ক্ষুদ্র অংশ রপ্তানি করা হচ্ছে, যা অভ্যন্তরীণ বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ভারতে ইলিশ রপ্তানির বর্তমান প্রক্রিয়া একটি বৃহত্তর কৌশলগত সিদ্ধান্তের অংশ, যা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্ককেও উন্নত করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রপ্তানি অনুমোদনের তুলনায় বাস্তবে কম ইলিশ রপ্তানি হয়। তাই, এটি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে তেমন কোনো প্রভাবিত করে না। 

সামগ্রিকভাবে, ভারতের সাথে ইলিশ রপ্তানি একটি পজিটিভ দিক নিয়ে আসে যা বাণিজ্যিক সম্পর্ককে মজবুত করে, একই সাথে দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার অবদান রাখে। রপ্তানির এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইলিশের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, চোরাচালান রোধ এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে, রপ্তানি থেকে অর্জিত মুদ্রা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে গতিশীল করতে সহায়ক হবে।

Post a Comment

0 Comments