Hot Posts

6/recent/ticker-posts

বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত: বাণিজ্য উপদেষ্টা

“বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত: বাণিজ্য উপদেষ্ট ”



ভারতের সঙ্গে ইলিশ রপ্তানি: বৃহত্তর স্বার্থের বিবেচনা

ভারতের সঙ্গে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এই রপ্তানির পেছনে রয়েছে বৃহত্তর বাণিজ্যিক স্বার্থ ও ভারতের বিশেষ অনুরোধ। দেশের অভ্যন্তরে ইলিশের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, রপ্তানির সমালোচনাকে তিনি ইমোশনাল বা আবেগপ্রবণ আখ্যা দিয়ে একে একটি বাণিজ্যিক সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

রপ্তানির পেছনে বৃহত্তর স্বার্থ ও বাণিজ্যিক কারণ

রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, ভারতের বিশেষ অনুরোধের ভিত্তিতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, "যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে, তা দেশের ইলিশ উৎপাদনের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। প্রতি বছর দেশে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়, যার মধ্যে মাত্র ৩ হাজার টন রপ্তানি করা হচ্ছে। এটি মোট উৎপাদনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশেরও কম এবং চাঁদপুর ঘাটের এক দিনের ইলিশের সমপরিমাণও নয়।"

বাণিজ্য উপদেষ্টার মতে, ইলিশ রপ্তানি না করলে চোরাচালান বাড়তে পারে। বৈধভাবে রপ্তানি করলে দেশের জন্য কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আসবে যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এছাড়া, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত হলে, দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য পণ্যের বাণিজ্যেও সুবিধা পাওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত ইতিমধ্যে শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সুবিধাজনক পদক্ষেপ।

সমালোচনাকারীদের আবেগপ্রবণ বললেন উপদেষ্টা

ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারীদের ‘ইমোশনাল’ বা আবেগপ্রবণ আখ্যা দিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, "রপ্তানি বিরোধীরা আবেগপ্রবণভাবে বিষয়টি দেখছে। রপ্তানি করার সিদ্ধান্তের পেছনে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত, এবং একে শুধু আবেগ দিয়ে বিচার করা উচিত নয়।" তিনি মনে করেন, দেশের ইলিশ সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং রপ্তানির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে ইলিশের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং এটি ভারতের বিশেষ অনুরোধে নেওয়া হয়েছে। "আমাদের কমিটমেন্ট আগের মতোই আছে," তিনি বলেন, "দেশের মানুষ ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রপ্তানি করলেই দেশে ইলিশের দাম বেড়ে যাবে না। দেশের বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ আছে এবং রপ্তানির ফলে যদি মূল্য বেড়ে যায়, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে রপ্তানির সিদ্ধান্ত

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও মজবুত হবে, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে। তিনি বলেন, "ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এবং আমরা তাদের ফ্যামিলি কান্ট্রি হিসেবে বিবেচনা করি। তাদের বিশেষ অনুরোধে আমরা রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছি। এছাড়া, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যাপক আলোচনা ও বিবেচনার পরেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"



রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও চোরাচালান রোধের চেষ্টা

ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, বৈধভাবে রপ্তানির ফলে চোরাচালান কমবে বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "ইলিশ রপ্তানি না করলে চোরাচালান বাড়বে। বৈধ পথে রপ্তানির ফলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে এবং চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হবে।"

প্রতিবেশী সম্পর্কের গুরুত্ব ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

ড. সালেহউদ্দিনের মতে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ইলিশ রপ্তানি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যা এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আরও মজবুত হবে। এছাড়া, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধা আসতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

সমালোচনার মধ্যেও রপ্তানির ইতিবাচক দিক

ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, "এই সিদ্ধান্তের কারণে কিছু লোকের আপত্তি থাকতেই পারে, তবে সার্বিকভাবে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে। আমরা প্রতিবেশী হিসেবে থাকতে চাই এবং এ ধরনের বাণিজ্যিক পদক্ষেপ আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।"

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত

ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "সরকারের মধ্যে কেউ কেউ রপ্তানির বিরোধী হলেও, সামগ্রিকভাবে উচ্চ পর্যায়ের নেতারা রপ্তানির পক্ষে মত দিয়েছেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে এবং ভারতের অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"

ইলিশের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ

দেশের বাজারে ইলিশের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "আমরা নিশ্চিত করছি যে, ইলিশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ঠিক থাকবে এবং রপ্তানির ফলে দাম বেড়ে গেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রপ্তানি শুধুমাত্র অতিরিক্ত ইলিশের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে, যা দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে তারপর রপ্তানি করা হচ্ছে।"

ইলিশ রপ্তানির পেছনের কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ইলিশ রপ্তানির পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কৌশল এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার প্রচেষ্টা। এই রপ্তানির মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে আরও বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

ভারতের সঙ্গে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্তে সমালোচনা থাকলেও, বৃহত্তর বাণিজ্যিক স্বার্থ ও প্রতিবেশী সম্পর্কের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এ সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments