Hot Posts

6/recent/ticker-posts

#খাগড়াছড়ি থেকে //সংঘাত //রাঙামাটিতেও, //নিহত ৪

 ''খাগড়াছড়ি থেকে সংঘাত রাঙামাটিতেও,

নিহত ৪''

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং সহিংসতার ঘটনায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। দুই জেলার সাম্প্রতিক সংঘাতের ঘটনায় অন্তত ৪ জন নিহত এবং ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং দুই জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেনা, পুলিশ, এবং বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারের এই সংঘর্ষের ঘটনায় পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।


সংঘর্ষের সূত্রপাত

এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে খাগড়াছড়িতে একটি মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে বাঙালি যুবক মো. মামুনের (৩০) গণপিটুনিতে মৃত্যুর মাধ্যমে। ঘটনার পরপরই পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় পরদিন বৃহস্পতিবার, যখন বাঙালিরা হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এই মিছিল চলাকালে বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িদের বাধার মুখে পড়ে। সংঘর্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পরপরই দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বেশ কয়েকটি দোকান এবং বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

উত্তেজনা এবং গোলাগুলি

দীঘিনালার সংঘর্ষের রেশ ছড়িয়ে পড়ে খাগড়াছড়ি সদর এবং আশপাশের এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) এবং রুবেল চাকমা (৩০)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়।

রাঙামাটিতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়া

খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের জের ধরে রাঙামাটিতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার সকালে রাঙামাটিতে পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হলে, সেই মিছিলেও উত্তেজনা ছড়ায়। সংঘর্ষের সময় আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত এবং অন্তত ৫৫ জন আহত হয়। নিহত ব্যক্তির নাম অনিক কুমার চাকমা, যিনি কর্ণফুলী ডিগ্রি কলেজের ছাত্র।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ

খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। শুক্রবার রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ঘটনার জন্য পাহাড়ি ও বাঙালি দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অভিযোগ করে যে, বাঙালিরা তাদের মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং মিছিলে পাথর নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ অভিযোগ করে যে, পাহাড়িরা প্রথমে তাদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং বাঙালিদের সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করে।

প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামে পাহাড়িরা প্রতিবাদ সমাবেশ করে এবং তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। অপরদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফও এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায় এবং পরিস্থিতির সমাধানে প্রশাসনের কাছে তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানায়।

প্রশাসনের আহ্বান

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উভয় সম্প্রদায়কে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সকলকে সংযম প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এই সংঘাতের মূলে থাকা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে।


ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির সাম্প্রতিক সংঘাত একটি জটিল এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান এই সংঘাত স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা এবং জীবিকা নির্বাহকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, প্রকৃত সমাধান পেতে হলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

এই সংঘাত শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে না, বরং স্থানীয় জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতা এবং অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে। ফলে, সংঘাতের মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষে?

Post a Comment

0 Comments