Hot Posts

6/recent/ticker-posts

‘‘শ্রীলঙ্কার নতুন //প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া //কুমারার সামনে //চ্যালেঞ্জের পাহাড়’’

 ‘‘শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারার সামনে চ্যালেঞ্জের পাহাড়’’

   শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ সোমবার শপথ নিয়েছেন অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে এখন একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সংকটে জর্জরিত দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করাই হবে তাঁর প্রধান কাজ। শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশকে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনতে হলে তাঁকে নিতে হবে একাধিক পদক্ষেপ এবং সামলাতে হবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক ঋণ, করের বোঝা, চাকরি ও জনকল্যাণ এবং ভূরাজনীতি—এই পাঁচটি ক্ষেত্রেই অনূঢ়া কুমারার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো দাঁড়িয়ে আছে।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ব্যাপক সংকটে পড়ে যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে তীব্র ঘাটতি দেখা দেয়। এতে দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশে পৌঁছায় এবং জনজীবনে নেমে আসে অস্থিরতা। খাদ্য, জ্বালানি এবং ঔষধের ঘাটতিতে জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কিছু পদক্ষেপের ফলে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমলেও, সংকট কাটিয়ে উঠতে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।নতুন প্রেসিডেন্টের প্রধান লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করে প্রবৃদ্ধির পথে ফেরানো। মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে জনগণের জীবনমানের উন্নতি এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনূঢ়া কুমারা এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ ও বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে দেশকে আর্থিক স্থিতিশীলতার পথে ফেরাতে কাজ করবেন। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই কাজে সফলতা অর্জন না করলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বৈদেশিক ঋণের বোঝা

বৈদেশিক ঋণের বিপুল বোঝা শ্রীলঙ্কার জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের মার্চে আইএমএফ থেকে ২৯০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। তবে ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। চীনসহ অন্যান্য ঋণদাতা দেশগুলোর সঙ্গে এক হাজার কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে চুক্তি হলেও এই চুক্তির শর্ত পূরণ করা নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য সহজ হবে না। 


চলতি বছরের জুনে চীনের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন চুক্তির পাশাপাশি ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক বন্ড পুনর্গঠনের জন্যও একটি খসড়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব ঋণের পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হলে আইএমএফের দেওয়া শর্ত পূরণে জটিলতা তৈরি হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। শ্রীলঙ্কার ওপর চেপে বসা এই ঋণের বোঝা কমাতে হবে অনূঢ়া কুমারাকে। নতুন প্রেসিডেন্ট ঋণ পুনর্গঠনের পাশাপাশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে চাইছেন। ঋণের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করা এবং অর্থনীতিকে সঠিক পথে চালিত করা ছাড়া এই ঋণ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানিয়েছেন, তিনি আইএমএফের শর্তগুলো পুনর্বিবেচনা করতে চান এবং দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে করের বোঝা কমানোর পদক্ষেপ নেবেন।

জনগণের ওপর করের বোঝা

আইএমএফের ঋণ গ্রহণের ফলে শ্রীলঙ্কার জনগণের ওপর করের বোঝা বেড়েছে। শ্রীলঙ্কার বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এর ফলে অনেক সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়েছে। অনূঢ়া কুমারা জনগণের ওপর করের বোঝা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি করের নীতিমালায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চান।তবে তাঁর দলের পার্লামেন্টে মাত্র তিনটি আসন থাকায় কর কমানোর মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণে পার্লামেন্টের সমর্থন পাওয়া খুবই কঠিন হবে। রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য তাঁকে আগাম সাধারণ নির্বাচনের পথে হাঁটতে হবে, যা পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। নতুন পার্লামেন্ট গঠনের পরই দেখা যাবে, তাঁর সরকার নীতি প্রণয়নে কতটা সফল হতে পারে।

চাকরি ও জনকল্যাণ

শ্রীলঙ্কার বেকারত্ব এবং জনকল্যাণমূলক সেবার ঘাটতি কাটিয়ে ওঠাও অনূঢ়া কুমারার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তিনি রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোকে আরও লাভজনক করার পরিকল্পনা করছেন। পাশাপাশি শিক্ষা খাতে নতুন করে ২০ হাজার চাকরির ব্যবস্থা করবেন এবং পর্যটনের মতো দেশের অর্থনীতির প্রধান খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন।তবে অর্থায়নের অভাব, লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অনূঢ়া কুমারা যদি পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে না পারেন, তবে তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলো কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

ভূরাজনীতি: ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো ভূরাজনীতি। ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। শ্রীলঙ্কা ঋণে জর্জরিত একটি দেশ, এবং দেশটির সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দুই দেশ হলো ভারত ও চীন। এই দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।চীন শ্রীলঙ্কার অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর জন্য বিপুল ঋণ দিয়েছে, যা দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে গতি এনেছে। তবে চীনের ঋণশোধে শ্রীলঙ্কাকে কঠোর শর্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অন্যদিকে ভারত শ্রীলঙ্কার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এবং কৌশলগত মিত্র। এই দুই দেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই হবে অনূঢ়া কুমারার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন আশার আলো

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারার সামনে চ্যালেঞ্জের শেষ নেই। তবে জনগণের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, স্বচ্ছ রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করবেন এবং দেশের অর্থনীতিকে সংকট থেকে টেনে তুলে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে আসবেন।অনূঢ়া কুমারার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। জনগণ তাঁর প্রতি আস্থা রেখেছে এবং নতুন করে স্বপ্ন দেখছে একটি সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক শ্রীলঙ্কার। যদিও তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জের পাহাড়, তবুও সঠিক দিকনির্দেশনা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে তিনি দেশকে এই সংকট থেকে বের করে আনতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

Post a Comment

0 Comments