Hot Posts

6/recent/ticker-posts

আইফোনের নতুন লক//// চুরি হলেও বিক্রি করা ///যাবে না পার্টস


''আইফোনের নতুন লক চুরি হলেও বিক্রি করা যাবে না পার্টস'' 

ফোন চুরি হয়ে যাওয়া মানে এখন আর শুধুমাত্র একটি ডিভাইসের ক্ষতি নয়, বরং এটি একটি বিশাল নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ফোনের সাথে সংযুক্ত থাকে ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য, যেমন ক্রেডিট কার্ড পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাক্সেসসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। চোর বা অপরিচিত কেউ এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে বড় ধরনের সাইবার অপরাধ ঘটাতে পারে, যা ব্যবহারকারীর জন্য প্রচুর অর্থনৈতিক এবং মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ফোন চুরি হলে এই ঝুঁকি কমাতে এবং ডিভাইসের নিরাপত্তা বাড়াতে অ্যাপল বিভিন্ন সুরক্ষা ফিচার যুক্ত করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘অ্যাক্টিভিশন লক’। 


অ্যাক্টিভিশন লক: কীভাবে কাজ করে?

অ্যাপলের ডিভাইস সুরক্ষার জন্য চালু করা ‘অ্যাক্টিভিশন লক’ ফিচারটি প্রথমে ২০১৩ সালে আইওএস ৭-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এটি ক্রমান্বয়ে আইফোন, আইপ্যাড, অ্যাপল ওয়াচ এবং ম্যাক ডিভাইসে যুক্ত করা হয়। অ্যাক্টিভিশন লক মূলত অ্যাপলের ‘ফাইন্ড মাই’ সিস্টেমের একটি অংশ, যা চুরি হয়ে যাওয়া আইফোন বা অন্য ডিভাইসকে দূর থেকে লক করে দেয়, ফলে চোর বা অন্য কেউ সেটি সহজে ব্যবহার করতে পারে না। ফোনটি পুনরায় চালু করতে হলে বৈধ অ্যাপল আইডি এবং পাসওয়ার্ড প্রবেশ করাতে হবে, যা শুধুমাত্র আসল মালিকের কাছেই থাকবে। ফলে ফোন চুরি হয়ে গেলেও সেটি ব্যবহার করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এই ফিচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি শুধুমাত্র ফোনের সুরক্ষাই নয়, বরং ফোনের বিভিন্ন পার্টস, যেমন স্ক্রিন, ব্যাটারি এবং ক্যামেরার সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। চুরি হওয়া ডিভাইসের যন্ত্রাংশ আলাদা করে বিক্রি করার প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করতে অ্যাপল এখন আইফোনের প্রতিটি কম্পোনেন্টকে নির্দিষ্ট অ্যাপল আইডির সাথে যুক্ত করছে। ফলে চুরি হওয়া ফোনের যন্ত্রাংশগুলোও কার্যত মূল্যহীন হয়ে যায়, কারণ সেগুলোর মালিকানা যাচাই ছাড়া সেগুলো ব্যবহার বা বিক্রি করা সম্ভব হয় না।

আইওএস ১৮ এর নতুন অ্যাক্টিভিশন লক

আইওএস ১৮-এ চালু করা অ্যাপলের নতুন অ্যাক্টিভিশন লক ফিচারটি আরও উন্নত ও নিরাপদ। এই ফিচারে, ফোনের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট যেমন ডিসপ্লে, ব্যাটারি, ক্যামেরা ইত্যাদি প্রত্যেকটি আলাদাভাবে অ্যাপল আইডির সাথে যুক্ত থাকে। নতুন ফিচারের ফলে আইফোনের প্রতিটি কম্পোনেন্টের আলাদা আইডি থাকবে এবং সেগুলো চুরি হয়ে অন্যত্র বিক্রি করে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়বে। যন্ত্রাংশ রিপেয়ার করার সময় আইফোন নিজেই যাচাই করবে যে, প্রতিস্থাপন করা পার্টসটি বৈধ কিনা এবং এটি ডিভাইসের আসল মালিকের অ্যাপল আইডির সাথে লিঙ্ক করা কিনা। এ ধরনের যাচাইকরণ ব্যবস্থার ফলে নকল বা চুরি হওয়া যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে আইফোনের কার্যকারিতা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।

থার্ড-পার্টি রিপেয়ার এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

যদিও নতুন অ্যাক্টিভিশন লক ফিচারটি আইফোন চুরির হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। থার্ড-পার্টি রিপেয়ার শপগুলো এখন বৈধ যন্ত্রাংশ খুঁজে পেতে এবং সেগুলোর বৈধতা যাচাই করতে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। যদি রিপেয়ার করার সময় প্রতিস্থাপন করা যন্ত্রাংশের মালিকানার প্রমাণ ব্যবহারকারীর কাছে না থাকে, তাহলে তার জন্য সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও অনুমোদিত চ্যানেল ছাড়া অন্য কোথাও আইফোন মেরামত করলে ডিভাইসের বিভিন্ন ফিচার সীমিতভাবে কাজ করতে পারে।

আইফোন মডেল এবং সুরক্ষা ফিচারের প্রয়োগ

নতুন অ্যাক্টিভিশন লক ফিচারটি আইফোন ১২ এবং এর পরবর্তী মডেলগুলোতে পাওয়া যাবে, তবে শর্ত হলো ডিভাইসে অবশ্যই আইওএস ১৮ ইন্সটল থাকতে হবে। এই আপডেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা শুধু ডিভাইসের সুরক্ষাই নয়, বরং তার প্রতিটি কম্পোনেন্টের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে পারবেন। ফলে ডিভাইসের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেলেও সেগুলো ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম ঘটানো যাবে না। 

ফিচারটির প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

অ্যাপলের এই নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি আইফোনের রিপেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করবে। অনুমোদিত চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে মেরামত করা উৎসাহিত হবে এবং কালো বাজারে চুরি হওয়া পার্টসের ব্যবসা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যাবে। একইসাথে, নকল ও অননুমোদিত যন্ত্রাংশের ব্যবহার কমে যাবে, যা আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপত্তার আরও একটি স্তর যুক্ত করবে। অ্যাপলের এ ধরনের উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা সারা বিশ্বের মোবাইল ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে এবং অন্য মোবাইল নির্মাতারাও এ ধরনের ফিচার নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে।

অ্যাপলের এই নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারকারীদের তাদের ফোনের সুরক্ষা নিয়ে আরো সচেতন করবে এবং ডিভাইসের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। আইফোনের প্রতিটি যন্ত্রাংশ যদি নিরাপদ থাকে এবং শুধু অনুমোদিত চ্যানেলের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়, তাহলে ফোন চুরি হওয়া কেবল অসম্ভবই নয়, বরং অর্থহীন হয়ে যাবে। 

সর্বোপরি, অ্যাপলের নতুন অ্যাক্টিভিশন লক ফিচারটি শুধুমাত্র একটি আপডেট নয়, বরং এটি একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ, যা স্মার্টফোন নিরাপত্তার নতুন যুগের সূচনা করেছে। ফোন চুরির প্রতিরোধে এবং মোবাইল ডিভাইস সুরক্ষায় অ্যাপলের এমন উদ্যোগ গ্রাহক এবং প্রযুক্তি জগতে প্রশংসিত হচ্ছে এবং আগামীতে এ ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন দেখা যাবে বলে আশা করা যায়।



Post a Comment

0 Comments